ছোট ও বড় পর্দার জনপ্রিয় মুখ অঙ্কিতা লোখান্ডে। তিনিই সুশান্ত সিং রাজপুতের প্রথম ও সবচেয়ে দীর্ঘ সময়ের প্রেমিকা। অঙ্কিতা আর সুশান্ত সাত বছর থেকেছেন এক ছাদের নিচে। ২০১৬ সালে এই জুটির বিচ্ছেদ হলেও এখনো তাঁর বাসার নেমপ্লেট থেকে মোছেনি সুশান্তের নাম। সুশান্তের বাবাকে তিনি বাবা বলেই ডাকেন। বোনেরাও এখন পর্যন্ত ভাইয়ের খোঁজ নিতে ফোন করে অঙ্কিতার নম্বরে। কারণ, ছয় মাস ধরে ক্রমাগত ফোন নম্বর বদলাচ্ছিলেন সুশান্ত। মৃত্যুর আগে কয়েক মাসে প্রায় ৫০টি সিম বদলেছেন তিনি। নানা কারণে সুশান্তের 'আত্মহত্যা'র পর খোঁজা হচ্ছে অঙ্কিতাকে। অঙ্কিতাও কোটি সুশান্ত ভক্তর মতো সুশান্তের মৃত্যুর সঠিক তদন্ত ও রহস্য উদঘাটনের পক্ষে কথা বলে যাচ্ছেন। সম্প্রতি 'টাইমস নাউ' নামের বিনোদনের সংবাদভিত্তিক চ্যানেলের 'ফ্যাঙ্কলি স্পিকিং' অনুষ্ঠানে এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে সরাসরি ভিডিও সাক্ষাৎকারে অংশ নিয়েছেন তিনি। সেখান থেকেই ১০টি প্রশ্ন নিয়ে এই আয়োজন।
১। এই কঠিন সময়টা কীভাবে পার করছেন?
আমি এখনো বিশ্বাস করতে পারছি না যে সুশান্ত নেই। আমি এখনো কোনো কিছুর জন্য প্রস্তুত নই। সুশান্ত এই দেশের তরুণ সমাজের আদর্শ। যে পাটনার ছোট্ট শহর থেকে এসে যা চেয়েছে, তাই করেছে। বলিউডে প্রতিষ্ঠা পাওয়ার স্বপ্নকে কোনো মই ছাড়াই হাতের মুঠোয় এনেছিল। যে বুদ্ধিমান, অত্যন্ত মেধাবী, পরিশ্রমী আর সৎ। ও ডায়েরিতে পাঁচ বছর পরে সে কী কী চায়, সব লিখেছিল। আর পাঁচ বছর পর সেসবের সব সত্যি সত্যি ঘটিয়েছিল। ও আত্মহত্যা করার মানুষই না।
একটি ন্যাশনাল টিভির ডান্স রিয়েলিটি শোতে সুশান্ত, অঙ্কিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ছবি: ইনস্টাগ্রামএকটি ন্যাশনাল টিভির ডান্স রিয়েলিটি শোতে সুশান্ত, অঙ্কিতাকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম২। দীর্ঘদিন সুশান্ত আপনার সঙ্গে ছিল। তখন কি ওকে কখনো বিষণ্ণ, হতাশ মনে হয়েছে?
কক্ষনো না। সুশান্ত হতাশ হওয়ার মতো মানুষই না। ও সব সময় বলত, ও যদি বলিউডে কিছু করতে না পারে, তাহলে ও নিজেই ক্যামেরা নিয়ে শর্টফিল্ম বানানো শুরু করবে। বাড়ি ফিরে বাবার সঙ্গে কৃষিকাজ করবে। ওর কাছে সব সময় বিকল্প প্ল্যান বি, সি ছিল। সবচেয়ে খারাপ ওর সঙ্গে কী হতে পারে, সেটা আমলে নিয়েই ও পথ চলছিল। তাই যা-ই ঘটুক না কেন, ওর হতাশ হওয়ার কথাই না। ও প্রাণশক্তিতে ভরপুর একটা মানুষ। ও মানুষের জীবনের গল্প শুনতে ভালোবাসে, মানুষকে নিজের গল্প বলতে ভালোবাসে, মানুষ ওর সম্পর্কে কী ভাবছে, সেইটা জানতে ভালোবাসে। যখন যাকে ভালোবাসে, উজাড় করে ভালোবাসে। অথচ মানুষ এখন বলাবলি করছে, ও নাকি হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করছে। দেশের কোটি মানুষ ওর জন্য লড়ছে। ও যদি জানত, দেখত, যে ওকে মানুষ কী পরিমাণ ভালোবাসছে। ওর জন্য কীভাবে লড়াই করছে!
দীর্ঘদিন সুশান্ত ও অঙ্কিতা এক ছাদের নিচে ছিলেন। ছবি: ইনস্টাগ্রামদীর্ঘদিন সুশান্ত ও অঙ্কিতা এক ছাদের নিচে ছিলেন। ছবি: ইনস্টাগ্রাম৩। আপনি কীভাবে জানলেন যে সুশান্ত মারা গেছে?
১৪ জুন দুপুরে খাওয়ার পর একটু ঘুম ঘুম লাগছিল। শুয়ে ছিলাম, তখনই একটা ফোন আসে। আননোন নম্বর থেকে। এক সাংবাদিক ফোন ধরতেই বলল, ‘সুশান্ত সিং রাজপুত যে আত্মহত্যা করেছে, শুনেছেন?’ ওইখানে ওই ঘুমের ঘোরের ভেতরেই সব থেমে গেল, সব শেষ হয়ে গেল।
৪। আপনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর সুশান্তের সঙ্গে আর যোগাযোগ হয়েছে?
না। যেদিন ও আমাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেল, তারপর আমিও আর চেষ্টা করিনি। একবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমার প্রথম ছবি 'মনিকর্ণিকা: দ্য কুইন অব ঝাঁসি' ছবির মুক্তির আগে আমার একটা পোস্টে মন্তব্য করেছিল যে ও আমাকে নিয়ে গর্বিত। এটুকুই। তবে ওর বাবা, বোনেরা ওর সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে একাধিকবার আমাকে ফোন করেছে। এই ব্যাপারগুলো আমার জন্য একটু অস্বস্তিকর ছিল। আমি সব সময় চেয়েছি, ও যেখনেই থাকুক, ভালো থাকুক। ও ওর সব স্বপ্ন স্পর্শ করুক। আমি যদি ওর বলিউডের রাস্তায় এগোনোর পথে বাধা না হই। তাই ও আমাকে ছেড়ে চলে গেলে আমি নিজেকে এভাবে সান্ত্বনা দিয়েছি, যে ও নিশ্চয়ই নিজের ভালোর জন্যই আমাকে ছেড়ে গেছে। এতে নিশ্চয়ই ওর ভালোই হয়েছে। আমি সব সময় ওর মঙ্গল কামনা করি। ওর বাবা এখনো আমার বাবা, ওর বোনেরা এখনো আমার দিদি। ও আমার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে গেছে, কিন্তু এই সম্পর্কগুলো আমি রেখেছি। ওর পরিবারও আমার সঙ্গে রেখেছে।
অঙ্কিতা লোখান্ডে। ছবি: ইনস্টাগ্রাম৫। আপনি জানতেন, সুশান্ত দীর্ঘদিন ধরে নানা মানসিক রোগের ওষুধ খাচ্ছে? এমনকি তাঁকে কুইটিপিন দেওয়া হচ্ছে?
চার বছর ধরে আপনারা যেমন বাইরে থেকে সুশান্তকে দেখছেন, আমিও তা–ই। আমি কল্পনাও করতে পারি না যে ওর এসব ওষুধের দরকার পড়তে পারে। কারণ, ও যেমন আবেগময়, তেমনই মানসিকভাবে শক্ত। ও নিজের মাকে হারিয়েছে। এর চেয়ে বড় ক্ষতি তো আর হয় না। তখন যদি ওর এসবের দরকার না পড়ে, তাহলে এখন কেন? আমি কিছুদিন আগে জানলাম, কুইটিপিন মারাত্মক ভয়ংকর ওষুধ। আত্মহত্যার প্রবণতা বাড়ায়। মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়ায়। ওর ট্রেইনারও এই বিষয়ে আমাকে জানিয়েছে। ও কেন এই ওষুধ খাবে? ওর মা মারা যাওয়ার পর রানীদিকে (সুশান্তের বড় বোন) ও নিজের মায়ের মতো জানত। ও কোনো দিন রানীদির কথার অবাধ্য হয়নি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সম্ভবত ওর ডেঙ্গু হয়েছিল। তখন ওর রানীদির বাসায় যাওয়ার কথা ছিল। অথচ যেদিন সকালে যাওয়ার কথা, যেদিন থেকে সুশান্তের সব ফোন নম্বর বন্ধ। সুশান্ত কোনো দিন এ রকম করে না। রানীদি তাই আমাকে ফোন করে কাঁদছিলেন।
৬। সুশান্তের অ্যাকাউন্ট থেকে ১৫ কোটি রুপি হাওয়া। আপনার কি মনে হয়, সুশান্ত কাউকে এত দামি গিফট দেবেন?
সুশান্ত খুব হৃদয়বান মানুষ। ও এমনিতে খুব সাধাসিধে। এত টাকা আয় করেও কিন্তু ওর জীবনযাপন আহামরি বদলায়নি। ওর টেলিস্কোপ, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, গিটার, সাইকেল, গাড়ি, সম্পত্তি বলতে এই। কিন্তু অন্যকে দামি উপহার দিতে ভালোবাসত। দিতেই পারে। কিন্তু এভাবে না যে অন্য একটা অ্যাকাউন্টে টাকা ট্রান্সফার করা হয়েছে, যার সঙ্গে সুশান্তের কাজের বা ব্যবসায়িক কোনো লেনদেন থাকার সম্ভাবনা নেই। কাউকে উপহার দেওয়ার ক্ষেত্রে তো এত অস্পষ্টতা বা লুকোচুরির কিছু নেই।
৭। সুশান্তের বোনজামাই যে পুলিশকে রিয়া চক্রবর্তীর বিরুদ্ধে অলিখিতভাবে অভিযোগ এনে ব্যবস্থা নিতে বলেছিল, এটা কি আপনি জানতেন?
তখন জানতাম না। কিছুদিন আগে মিতুদি (সুশান্তের আরেক বোন) আমাকে জানায়, যে পুলিশ লিখিত এফআইআর ছাড়া কোনো ব্যবস্থা নেবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছিল। আর সুশান্তের পরিবারও সুশান্তকে নিয়ে কোনো নেতিবাচক খবর হোক, এমন কিছু চাচ্ছিল না। সুশান্তের ক্যারিয়ারের ক্ষতি হতে পারে, সেই ভয়ে তারা লিখিত কোনো অভিযোগ করেনি।
সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: ইনস্টাগ্রাম৮। আপনি রিয়া চক্রবর্তীকে আগে থেকে চিনতেন? সিদ্ধার্থ পাঠানিকে চিনতেন?
না, এদের কাউকে চিনতাম না। প্রায় দুই বছর ধরে সুশান্ত ওর পরিবারের সঙ্গে ঠিকমতো যোগাযোগ করছিল না। আমি সুশান্তের এক বন্ধুর কাছ থেকে ও ভালো আছে কি না জানতে চাইলে সেও জানায়, দীর্ঘদিন ধরে ওর সঙ্গে সুশান্তের যোগাযোগ নেই। এটা শুনে অবাক হয়েছি। তবে এর বেশি তো জানার বা খোঁজ নেওয়ার অধিকার তো আমি রাখি না।
৯। রিয়া চক্রবর্তীর একটা ভিডিও ভাইরাল হয়েছে, যেখানে কালো একটা টপস পরে সে বলে, 'আমার বয়ফ্রেন্ড ছোটখাটো গুন্ডা, আর আমি ডন। ও জানেই না, যে আমি কত বড় ডন', এই ভিডিওটা দেখেছেন? এঁর সম্পর্কে আপনার কী ধারণা?
না, আমি এসব কোনো ভিডিও দেখিনি। আমি যাঁকে চিনি না, জানি না, তাঁর সম্পর্কে গণমাধ্যমে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। আমি শুধু চাই, সত্য বের হয়ে আসুক।
১০। আপনার কি মনে হয় সুশান্ত আত্মহত্যা করেছেন, না তাঁকে হত্যা করা হয়েছে?
সবচেয়ে বড় কথা হলো, সুশান্ত আর বেঁচে নেই। আমি নিশ্চিত, ওর এখনকার ডায়েরিতেও পাঁচ বছর পর ও কী কী করবে সেগুলো লেখা। ও যদি আত্মহত্যা করে, তো আমি জানতে চাই, ও কেন আত্মহত্যা করেছে। ওকে যদি মেরে ফেলা হয়, তো আমি জানতে চাই, কেন মেরে ফেলা হলো। যেটাই ঘটুক, আমি নিশ্চিত, বাইরে এমন এক বা একাধিক মানুষ আছে, যে বা যারা সম্পূর্ণ সত্য জানে।
Monday, August 10, 2020
সুশান্তকে নিয়ে যে ১০ প্রশ্নের জবাব দিলেন অঙ্কিতা
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.
.jpg)
No comments:
Post a Comment