আমরা অনেকেই “মোটিভেশন” নামক শব্দটার সাথে কমবেশি পরিচিত; মোটিভেশন জিনিসটাও আসলে চমৎকার!
এই যেমন ধরুন আপনি তিন মাস ধরে জুতার শুকতলা খয়িয়েও একটা চাকুরী না পেয়ে হতাশায় সায়োনাইড বিষ খেতে যাচ্ছেন এমন সময় আমি যদি আপনাকে সফলতার গল্প শুনিয়ে অনুপ্রাণিত করি তাহলে নিশ্চিত আপনার চোখে আমি আইডল কিংবা এ্যঞ্জেল হয়ে যাবো ; ফলশ্রুতিতে আপনি বাজার হতে আরও একজোড়া নতুন জুতা কিনে চাকুরীর আশায় পথে পথে ঘুরবেন….
জীবন বাঁচানো কিংবা হতাশা হতে মুক্তি দেওয়া নিশ্চয়ই মহৎ কাজ তবে রোগের কার্যকর ঔষধ না দিয়ে শুধুমাত্র স্বান্তনা নামক এনাসথেসিয়াতে জীবন স্বার্থক হয়না; অনিয়ন্ত্রিতভাবে এন্টিবায়োটিকও একটা সময় অকার্যকর হয়ে যায়!
বাংলাদেশ এবং মোটিভেশন:
বাংলাদেশে খুব পরিচিত দুই জন মোটিভেশন স্পিকার হলেন সেলাইমান শুখন এবং আইমান সাদিক ( আমি কখনোই বলছি না সোলাইমান শুখন মোটিভেশন নামক মুখোশের আড়ালে অমুক দলের সুবিধাভোগী হয়ে গুণগান গায় কিংবা আইমান সাদিক সাবস্ক্রাইবার বাড়াতে বুজরুকী করেন) আমি বলবো তারা নিজ নিজ অবস্থান হতে সফল মানুষ।
তবে আপনি বিশ্বাস করুন কিংবা না করুন এইসব মোটিভেশন স্পিকারের পিছনে শুধুমাত্র আপনার-আমার-আমাদের ফ্যান-ফলোয়ারের সাপোর্ট’ই তাদের আজকের দিনে সেলিব্রেটি শাহেনশাহ বানিয়েছে….
“সেলিব্রেটি পচিয়ে সেলিব্রেটি হওয়া” একটি সহজতম সমীকরণ তবে আমি এখানে তর্ক করতে আসিনি কিংবা সমালোচনাও করতে আসিনি; শুধুমাত্র বাংলাদেশের স্বাপেক্ষে মোটিভেশনের স্বরূপ তুলে ধরতেই উদাহরন দিলাম মাত্র।
বাংলাদেশে মোটিভেশন বিষয়টা হলুদ প্রশ্নবোধক চিহ্ন হলেও উন্নত বিশ্বে সাইকোলজিক্যালি মোটিভেশন বিষয়টি দৈনন্দিন জীবনেরই একটি অংশ; সেখানে একজন মানুষ টাকার বিনিময়ে সাইকিয়াট্রিস্টের (সাইকোলজি স্পেশালিষ্ট এর) নিকট কনসার্ন গ্রহণ করেন।
সুতরাং মোটিভেশনের সাথে ধনী-গরীবের কোন সম্পর্ক নেই; তবে সাঠিক ও কার্যকর মোটিভেশন একজন গরীবকেও ধনী মানুষে পরিণত করতে পারে; মূলত মোটিভেশন হলো সফলতার মহাঔষধ!
মোটিভেশন কোন প্যারাসিটামল নয়!
হাতুড়ে ডাক্তারেরা যেমন যেকোনো রোগেই প্যারাসিটামল প্রেসক্রাইব করেন; তেমনি খোলা মঞ্চে মাইক হতে পেলেই মাইকেল বনে যাওয়া মোটিভেশন স্পিকারেরা হাততালি পান বটে তবে হাততালি দেওয়া সেইসব হাতগুলিতে আদতেই কি সফলতার স্বর্ণপ্রদীপ পৌছায়???
আমরা প্রতিটি মানুষ ইউনিক-আমাদের সকলের ব্রেইন ইউনিক-আমাদের প্রত্যকের লাইফ ইউনিক-আমাদের প্রত্যেকের লাইফের সমস্যাগুলিও ইউনিক…..তাহলে আমাদের সমস্যার সমাধানও ইউনিক হওয়া উচিত।
তাই মোটিভেশন মানেই খোলা উপদেশ নয়, কেননা খোলা উপদেশের ভেতরটা প্রায়শ খেলো হয়!
[তবে হ্যা, কিছু কমন বিষয়ে মোটিভেশন সবার জন্যই প্রযোজ্য বটে]
আদর্শ মোটিভেশন:
“লাইফে সফলতার জন্য ইচ্ছাশক্তি, ধৈর্য্য, পরিশ্রম এবং জ্ঞান প্রয়োজন” এই কথাগুলো আমরা সবাই জানি; এই কমন কথাগুলিই দৃষ্টান্ত আর উদাহরণ মিশিয়ে শ্রুতিমধুর করে উপস্থাপন করায় হলো মোটিভেশন।
আমি আবারো বলছি “আদর্শ মোটিভেশন ইউনিক হওয়া উচিত” তাই আমার এই লেখার মাঝেই যে আপনার লাইফের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে এমন মহা-মাদুলী বিক্রি করার নাম আর যায় হউক মোটিভেশন নয়।
আমাদের লাইফের জন্য শুধুমাত্র ইচ্ছাশক্তি+ ধৈর্য্য+পরিশ্রম+জ্ঞান হলেই চলবে না বরং সফলতার রাস্তায় এইসব ইলিমেন্ট কিভাবে ইউটিলাইজ করতে হবে সেই পথটাও তো দেখাতে হবে নাকি??
আমি বলতেই পারি যে “একটা সময় শাহরুখ খান মুম্বাই এর রাস্তায় রাস্তায় রাত কাটিয়ে গৌরির খোজে আজ সুপারস্টার হয়ে গিয়েছে” অথচ সেই সময়ে তার যেই বন্ধুটি সামান্য কয়টা টাকা দিতো সেটিই তাকে পথ চলার অনুপ্রেরণা আর শুকনা রুটিতে পেট ভরানোর মতোন শক্তি যুগিয়েছিলো; এটাই আদর্শ মোটিভেশন!
শুকনা কথাতে চিড়া ভিজতে পারে বটে তবে সফলতার জন্য শুধুমাত্র উপদেশ নয় বরং সঠিক পথের অনুসন্ধান দেওয়াও আবশ্যক।
আই এ্যাম দ্যা অনলি পারফেক্ট মোটিভেশনাল স্পিকার!
ইউটিউব- ফেসবুকে এতোসব সেলিব্রেটি মোটিভেশনাল স্পিকারের ভীড়ে কেবলমাত্র “আমিই একমাত্র পারফেক্ট মোটিভেশনাল স্পিকার” কথাটা শুনতে খুবই হাস্যকর লাগবে, কিন্তু আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলছি আমিই একমাত্র পারফেক্ট মোটিভেশনাল স্পিকার…ইউ ক্যান ফেয়ার আদার ওয়াইজ থোরাই কেয়ার।
সত্যিই আমি পারফেক্ট মোটিভশনাল স্পিকার তবে সেটা আমার নিজের জন্য, ঠিক আপনার জন্যই পারফেক্ট মোটিভেশনাল স্পিকার যেমন আপনি নিজেই।
উদারণস্বরূপ আমার নিজের বাসার টয়লেট ছাড়া আমি অন্য কারো বাসার টয়লেট উইজ করতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করিনা; তাইবলে পথের মাঝে প্রাকৃতিক ডাক দিলে ঠিকই কিন্তু পাঁচ টাকা খরচ করে পাবলিক টয়লেটে প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিই!
বিষয়টা যতোই ঘেন্নার হউক আমি কিন্তু ঠিকই ইভ্যুউলুটেড হয়েছি আইমিন অভিযোজিত হয়েছি।
একইভাবে সমগ্র সমস্যা আর পরিস্থিতি মেকাবেলায় আপনার ব্রেইন স্বকীয়ভাবে মোটিভেশনের কাজ করে; আপনার প্রয়োজন শুধু “দুঃশ্চিন্তা” হতে “দুঃ” নামক দূরব্যাধি করে “চিন্তা” করা।
খুবই সহজ সলুউশান তাইনা??
আমাদের লাইফের সকল প্রকার হতাশা এবং সমস্যা সমাধানের জন্য দুইজন ফ্রি মোটিভেশন গাইড আছে (১) মন(মাইন্ড) আর (২) মাথা(ব্রেইন); তাদেরকে কাজে লাগিয়েই লাইফের সকল প্রবলেমের সলুউশান সম্ভব।
আসুন আমি ডেমো হিসেবে আপনাকে কিছু পথ বাতলে দিই…..
★সমস্যা: প্রেমে পড়েছি;এতে তো পড়াশোনার ক্ষতি হতে পারে। আবার মনের মানুষকে ভুলতেও পারছি না…কি করবো?
♦সমাধান: মোটেই তাকে ভুলে যাবার দরকার নেই; তবে পড়াশোনার টাইম ভুলে না গেলেই হলো। এইটুকু করতে পারলে গো এ্যাহেড….আদারওয়াইজ ফরগেট!
★সমস্যা: বাপের তো টাকা নাই তাইলে সায়েন্স নিয়ে কি করবো? ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হওয়া কি মুখের কথা নাকি?
♦সমাধান: আপনি সায়েন্সই নিন, বাপের টাকা না থাকলে টিইশান করে টাকা জমান। টিফিনে উপোষ করে টাকা জমান নইলে তিনবেলা না খেয়ে দিনে দুইবেলা খাবেন…একান্ত দরকার হলে দুয়ারে দুয়ারে হাত পাতবেন।
লজ্জা লাগবে? অথচ টাকার অভাবে যদি স্বপ্ন পূরণ করতে না পারেন সেই লজ্জা তো আজীবন বয়ে বেড়াতে হবে।
হাত এমনভাবে পাতুন যেন কাল আপনিও হাত উবুর করতে পারেন।
আর চূড়ান্ত সত্যটা হলো ইশ্বর স্বার্থপর নয়।
★সমস্যা: ধূর….লাইফটাই পানসা পানসা লাগে!!
♦সমাধান: নূন দিয়ে আমড়া কাইট্টা কাইট্টা খান; বুঝছেন? অর্থাৎ সময়টাকে কাজে লাগান। মানুষের যখন পরিশ্রমের তুলনায় অবসর বেশী হয় তখনই লাইফটা বোরিং বোরিং লাগে।
সুতরাং এমন কিছু করুন যেটা করতে ভালো লাগে এবং পকেটে কিছু টাকা আসে…এমনিই মনটা ভালো হয়ে যাবে।
আর ঘরে বসে শর্ট প্যান্ট পড়েও টাকা ইনকাম করার ওপেন প্লাটফর্ম হলো ই-ন-টা-র-নে-ট; এখন আপনি সেই নেটে ইন করবেন কিনা সেইটা আপনার ব্যাপার!
এমন করে বহু বহু সলুউশান লেখা যেতেই পারে; সেগুলি পড়ে হয়তো আপনার মনটাও ভালো লাগবে…কিন্তু আপনি যদি সেগুলি মাথাতে ইনপুট করে কাজে না লাগান তাহলে সবই সারশূন্য…..সো লেটস গো টু ওয়ার্ক।
Wednesday, October 21, 2020
মোটিভেশন কি সত্যিই আপনার জীবন পাল্টে দিতে পারে??
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
Post Top Ad
Responsive Ads Here
Author Details
Templatesyard is a blogger resources site is a provider of high quality blogger template with premium looking layout and robust design. The main mission of templatesyard is to provide the best quality blogger templates which are professionally designed and perfectlly seo optimized to deliver best result for your blog.
.jpg)
No comments:
Post a Comment